আবাহনী-মোহামেডানের হোম ভেন্যু বেহাল, দেখার কেউ নেই?

Jan 8, 2025 - 15:13
 0  0
আবাহনী-মোহামেডানের হোম ভেন্যু বেহাল, দেখার কেউ নেই?

মাঠে খেলছে আবাহনী-মোহামেডান। কিন্তু গ্যালারির দিকে তাকালে মনে হয় পাড়ার কোনো ম্যাচ হচ্ছে। ফ্যাকাশে শব্দ দিয়েও গ্যালারির বেহাল দশা ঠিকভাবে বর্ণনা করা যায় না। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের গ্যালারির এখন এমন বেহাল দশা।

এমনকি তিন বছর আগে যখন আপনি এই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছিলেন তখন এটিকে ইউরোপের স্টেডিয়ামের মতো মনে হয়েছিল। মাঠের মতো গ্যালারিও। কিন্তু এখন দুজনেই তাদের দীপ্তি হারিয়ে ফেলেছেন। মাঠের মাঝখানে ক্রিকেট পিচ। যা স্পষ্ট বোঝা যায়। ক্রিকেট পিচটি স্থানীয় ক্রিকেট লিগের খেলার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কয়েক মাস ধরে ক্রিকেট থেকে ফুটবলে পাল্টে গেছে। কিন্তু গ্যালারির অবস্থা দুই-তিন বছর আগের তুলনায় অনেকটাই ফারাক। এই আধুনিক যুগে মনে হয় বাংলাদেশ ফুটবলকে অগ্রগতির চেয়ে বেশি ভালোবাসে, অবনতির পথে হাঁটছে।

গ্যালারির অবস্থা খারাপ, রং ছিঁড়ে যাওয়ায় স্যাঁতসেঁতে। অসাবধানতার কারণে দিন দিন এর অবস্থা খারাপ হচ্ছে। প্রশ্ন হল, গ্যালারির বেহাল দশা কি একটু রং করে কাটিয়ে উঠতে পারত না? অবশ্যই পারে। কত টাকার দরকার ছিল! কিন্তু সেদিকে কারো নজর নেই বলে মনে হয়। লক্ষ্য দায়িত্বের সাথে খেলা শেষ করা। তবে প্রিমিয়ার লিগে এক বছরের জন্য এই স্টেডিয়ামে মোহামেডানকে আতিথ্য দিলে বসুন্ধরা কিংস সেই সময় পুরো গ্যালারি রঙ করার উদ্যোগ নেয়। একদিকে লাল, অন্যদিকে সাদা কালো। গ্যালারির চেহারা তখন বদলে গেছে।

স্টেডিয়ামে ঢোকার সময় একটা মনোরম অনুভূতি হতো। কিন্তু এখন সেই অনুভূতি পাল্টে গেছে, গ্যালারি দেখলেই চোখে ব্যথা হয়। এর অন্যতম কারণ রাজাদের চলে যাওয়া। কিংস তার নিজস্ব ভেন্যু পেয়ে এটি ছেড়ে. কিংসের পর আবাহনী-মোহামেডান যৌথভাবে আয়োজন করেছে এখানে। আবাহনী-মোহামেডানকে এক মৌসুম ব্যবহার করার পর গত বছর আর ভেন্যু দেয়নি কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এক মৌসুম পর এবার প্রিমিয়ার লিগের ভেন্যুতে পরিণত হয়েছে আবাহনী-মোহামেডান। কিন্তু গ্যালারি এখন পরিত্যক্ত বাড়ির সিঁড়ির মতো।

স্টেডিয়াম দেখাশোনার জন্য বেশ কিছু স্টেকহোল্ডার রয়েছে। প্রথমত, স্টেডিয়াম সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। কারণ তারাই স্টেডিয়ামের মালিক। স্থানীয় জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলি ক্রীড়া পরিষদের পক্ষে কাজ করে। সরকার পরিবর্তনের পর জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছিল।

কুমিল্লার স্থানীয় সংগঠকরা বলছেন, এই স্টেডিয়ামে যে দুটি দল প্রিমিয়ার লিগে খেলছে তাদের গ্যালারি ঠিক করার দায়িত্ব এখন। কারণ তারাই মাঠ ব্যবহার করছে। গ্যালারি সংস্কারের দায় এড়াতে পারে না ঐতিহ্যবাহী দুই ক্লাব। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও পারবে না। কিন্তু বাফুফে বা ক্লাবের কেউ কিছু করছে না।

মোহামেডানের ফুটবল সম্পাদক আবু হাসান প্রিন্স বাফুফেকে দোষারোপ করে বলেন, ভেন্যুটি এখন বাফুফের। তারা চাইলে গ্যালারি ঠিক করতে পারত। কিন্তু কেন নয়? আবু হাসান আরও বলেন, "বাফুফে মাঠের দেখভাল করে। গ্যালারি সংস্কারেরও দেখাশোনা করে। তারা সবাইকে দায়িত্ব দেয়। এটা ঠিক নয়। আমরা আমাদের ড্রেসিংরুম ঠিক করেছি, আবাহনী আবাহনীকে ঠিক করেছি। ফোয়ারা বসানো হয়েছে, এটা পেইন্ট করা হয়েছে, ওয়াশরুম ঠিক করা হয়েছে।"

আবাহনীর ব্যবস্থাপক সত্যজিৎ দাস রুপুও জানান, তারা যে পোশাক ব্যবহার করবেন তা ঠিক করে দিয়েছেন। আবাহনীর ভিআইপি বক্সের একটি অংশ রং করা হয়েছে, যার দাম ২৫ হাজার টাকা। বাকিগুলো কেন আঁকা হলো না? জানতে চাইলে রুপু উত্তর দেন, "এটা কার ইন্সটলেশন? এটা কি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নয়? প্রধান দায়িত্ব ক্রীড়া পরিষদের। তবে, স্থানীয়রা আমাদেরকে গ্যালারি রঙ করার জন্য অনুরোধ করেছিল। আমরা ভিআইপি পার্ট করেছি। এখন তারা জিজ্ঞেস করল? বাকিটা ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল ক্লাবগুলোর ওপর চাপিয়ে দেবে কেন?

৫ আগস্টের পর কুমিল্লা স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে ঢুকে সব ফ্যান ও লাইট কেড়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এখন তাদের নিজ নিজ ড্রেসিংরুমে বসিয়েছে আবাহনী-মোহামেডান।

গতকাল ফেডারেশন কাপে আবাহনী-মোহামেডানের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এই স্টেডিয়ামে। ঢাকা থেকে ম্যাচ কভার করতে গিয়ে প্রেস বক্সে কোনো সুবিধা পাইনি। ল্যাপটপের টেবিলে কোন বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই। ওয়াইফাই নেই। কাজী সালাউদ্দিন চলে গেছেন। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন কমিটি এসেছে। কিন্তু পরিবর্তন কোথায় হলো?

কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের গ্যালারির দিকে তাকালে মনে হবে এদেশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ফুটবল ফেডারেশন বা ক্লাব বলে কিছু নেই। ছোট গ্যালারিতে রং করার দায়িত্ব কেউ নেয় না। গ্যালারি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এটা দেখতেও খারাপ লাগে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow