মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের ভারত সফরকালে কাশ্মীরে হামলা, নেপথ্যে অন্য কিছু?
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের ভারত সফরকালে কাশ্মীরে হামলা, নেপথ্যে অন্য কিছু?

ভারতে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তার চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিককালে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বড় ধরনের হামলার ঘটনা এটি। যা গোটা ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।
জেডির সফর ভারত-মার্কিন সুসংবদ্ধ আন্তর্জাতিক কৌশলগত অংশীদারত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শুধু তাই নয় সফরটি জেডির সঙ্গে ভারতের ব্যক্তিগত সখ্যতাও নির্দেশ করে। এ সফরে তিনি পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন। রাষ্ট্রীয় বৈঠক বাদেও পরিবারের সঙ্গে ভারতের প্রকৃতি ও ঐতিহ্য উপভোগ করছেন তিনি।
সফরের প্রথম দিন সোমবার নয়াদিল্লির ৭ লোক কল্যাণ মার্গে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও তার পরিবারের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি ভ্যান্সকে আলিঙ্গন করেন এবং তার স্ত্রী ঊষা ভ্যানসের সাথে আলাপচারিতা করেন। এ সময় তাদের পারিবারিক আবহে আলাপচারিতা করতে দেখা গেছে।
চার দিনের এই সফরে জেডি পরিবার ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সফর করবেন। এমন সময় অন্যতম পর্যটন স্পট কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলা হলো।
এ ঘটনার পর জেডি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, ‘ভারতের পাহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি ঊষা এবং আমি সমবেদনা জানাই। গত কয়েক দিন ধরে, আমরা এই দেশ এবং এর জনগণের সৌন্দর্যে অভিভূত। এই ভয়াবহ হামলার শোক প্রকাশের সময় আমাদের চিন্তাভাবনা এবং প্রার্থনা তাদের সাথে রয়েছে।’
তেমনি শোক জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদিকে ফোন করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল এক এক্স বার্তায় ওই ফোন কলের কথা উল্লেখ করেন। জয়সোয়াল বলেন, ট্রাম্প এই হামলার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকা ভারতের পাশে রয়েছে এবং সম্ভাব্য সব সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দেন ট্রাম্প। তিনি লিখেন, ‘কাশ্মীর থেকে বিরক্তিকর খবর পেয়েছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকা দৃঢ়ভাবে ভারতের পাশে আছে। যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার শান্তি এবং আহতদের
আরোগ্য কামনা করি। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং ভারতের জনগণের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন এবং গভীর সহানুভূতি রয়েছে। আমাদের হৃদয় আপনাদের সবার সঙ্গে আছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পাওয়ার ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে সখ্যতা বাড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। সেই সফরে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা ও চুক্তি সই হয়। এ ছাড়া ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর কয়েক বার মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ হয়েছে। সেসব ফোনালাপ এবং সরাসরি বৈঠকে ট্রাম্প মোদির প্রশংসা করতে ভুলেননি। সে সঙ্গে দুই দেশের এক সঙ্গে কাজ করার দৃঢ় বার্তা দিয়ে আসছেন ট্রাম্প।
কাশ্মীরে হামলার পর ট্রাম্পের শোকবার্তাতেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকা দৃঢ়ভাবে ভারতের পাশে আছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ভারতে বিতর্কিত ওয়াকফ বিল পাস করা নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের উত্তেজনা চরমে। সম্প্রতি হোলি উৎসবে মুসলিম নির্যাতন এবং মসজিদের সামনে ডিজে পার্টি করার ঘটনাও ঘটে। এ সংক্রান্ত বহু ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, মঙ্গলবার জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। তখন সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের আংশিক স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করেন।
ভারতের দাবি অনুসারে, টিআরএফ পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ‘ছায়া সংগঠন’। সংগঠনেরই পাঁচ-ছয়জন পহেলগাঁওয়ে হামলা চালায়। তাদের উদ্দেশ্য কী এ নিয়ে এখনও তেমন কিছু জানা যায়নি।
এদিকে কাশ্মীরে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী। তারা বলেছে, ‘হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ তাদের গ্রেপ্তার এবং তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
What's Your Reaction?






