খড়ের গাদা থেকে ইঁদুর তাড়ানোর জন্য কৃষকের অভিনব আবিষ্কার
আমন ধান কাটার পর কৃষকরা খড়ের স্তূপ সাজাতে ব্যস্ত। এই খড় আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। কিন্তু একটি ইঁদুরও এই খড় কামড়াবে না। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কৃষকরা ২০-২৫ বছর ধরে এভাবে খড় সংরক্ষণ করে আসছেন। তারা মাত্র ৩০০ টাকার কালোজিরা দিয়ে ১৪,০০০ বেল খড় রক্ষা করার ব্যবস্থা করেন। অন্য কোনও পদ্ধতিতে ইঁদুরের হাত থেকে খড় বাঁচানো সম্ভব নয়। ইঁদুররা খড় ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ফেলে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুসারে, এবার জেলায় ৮৪,১০৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এর পরিমাণ ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ২৬৪ বিঘা। কৃষকদের হিসাব অনুসারে, প্রতি বিঘায় ১,৬০০ থেকে ১,৮০০ বেল খড় উৎপাদিত হয়। যদি আমরা কমপক্ষে ১,৬০০ বেল হিসাব করি, তবুও জেলায় খড়ের বাজার মূল্য ৫৪২ কোটি ৬১ লক্ষ টাকারও বেশি, ধরে নিচ্ছি প্রতিটি বেল খড়ের দাম ৫ টাকা।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধান চাষের খরচ আসে খড় থেকে। যারা প্রান্তিক কৃষক তারা এখন খড় বিক্রি করছেন। আর যাদের সামর্থ্য একটু বেশি, তারা এই খড়ই মজুত করেন। দাম বাড়লে তারা খড়ি বিক্রি করেন। কৃষকরা এই খড়ি নষ্ট হতে দেন না। যদি তাদের বাড়িতে নিজস্ব গরু থাকে, তাহলে তারা গরুদের খাবার দেয়। অতিরিক্ত খড়ি বিক্রি করেন। কেউ কেউ গরুর খাবার হিসেবে কিনেন, আবার কেউ কেউ জ্বালানি হিসেবে কিনেন। এ কারণেই কৃষকদের কাছে খড় খুবই মূল্যবান। তারা নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে খড়ি সংরক্ষণ করেন।
কৃষকরা জানান যে তারা সাধারণত বর্ষাকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এই মৌসুমে এই খড়ের দাম বেড়ে যায়। যারা খড় মজুত করেন তারা বর্ধিত মূল্যের জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু যদি এই খড় ইঁদুর কেটে ফেলে, তাহলে আর লাভ থাকে না। তাই তারা নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কালোজিরা ব্যবহার করে ইঁদুর থেকে খড় রক্ষা করেন।
সম্প্রতি, যখন আমি গোদাগাড়ির কান্তাপশা গ্রামে গিয়েছিলাম, তখন কৃষক মিঃ মন্টু মিঞ্জকে খড়ের গাদা তৈরি করতে দেখেছি। প্রথমে তারা মাটি থেকে কিছুটা উঁচুতে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছিলেন। তারা এই প্ল্যাটফর্মে খড়ের ব্যবস্থা করছেন। চারটি খড়ের গাদা সাজানোর পর যে উচ্চতা দাঁড়ায় তাকে ‘বাইট’ বলা হয়। যত বাইট এভাবে সাজানো হয়, তার উপর কালো জিরা ছিটিয়ে দিতে হবে।
কৃষক মিঃ মন্টু মিঞ্জ বলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি এলাকার লোকদের এভাবে খড় সংরক্ষণ করতে দেখেছেন। তার বাবাও এভাবে খড় সংরক্ষণ করতেন। তিনি পরের বছর ধরে এভাবে খড় সংরক্ষণ করবেন। আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে খড়ের গাদা ভেঙে ফেলা হবে। এই সময়ে, একটি ইঁদুরও খড়ের গাদায় পা রাখবে না। তিনি বলেন, এক কেজি কালো জিরা বীজের দাম ৩০০ টাকা। এর বিনিময়ে তিনি ১৪,০০০ খড়ের গাদা সংরক্ষণ করতে পারবেন।
উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের কৃষক কাওসার আলী এখন কালিজিরা পদ্ধতি ব্যবহার করে তার পাঁচ হাজার বেল খড় সংরক্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি ৬০ টাকা কালিজিরা দিয়েছেন। এতে ইঁদুর লাগবে না।
খড়ের বেল সংরক্ষণে কৃষকদের এই উদ্ভাবন সম্পর্কে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, ইঁদুর কালিজিরা গন্ধ পায় না। শুধু খড় নয়, গমের ক্ষেতে ইঁদুর এলে মানুষ কালিজিরা ছিটিয়ে দেয়। তখন ইঁদুরের সংখ্যা কম থাকে।
What's Your Reaction?