দুটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ছয়টি ব্যাংকের অডিট করবে

Jan 6, 2025 - 11:13
 0  0
দুটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ছয়টি ব্যাংকের অডিট করবে

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সংকটে পড়া ছয় ব্যাংকের সম্পদের মান পর্যালোচনা করতে দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুটি সংস্থা হল আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং এবং কেপিএমজি। এজন্য ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ অডিটে অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

যে ছয়টি ব্যাংকের অডিট হবে সেগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক। সূত্র জানায়, আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের সম্পদের গুণমান অডিট করবে। কেপিএমজি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের সম্পদের গুণমান অডিট করবে। এর মধ্যে চারটি ব্যাংক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন। গত আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এরই মধ্যে এডিবির বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসেছেন। তারা এসব ব্যাংকের সম্পদের মান পর্যালোচনার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছে। এ ছাড়া অডিট টিমকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে ছয় ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ও রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ছয় ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এডিবির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় নিরীক্ষকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ সপ্তাহে পরিদর্শনে আসবেন। আগামী সপ্তাহ থেকে বিদেশি অডিটররা আসবেন। তাদের সহায়তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, প্রাথমিক পরিদর্শনে এসব ব্যাংক থেকে বেনামে মোটা অঙ্কের টাকা তোলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন দুই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানই খুঁজে বের করবে এই ঋণের গতিপথ, কারা দোষী ও সুবিধাভোগী। তারা এসব ব্যাংকের সম্পদের মূল্যও নির্ধারণ করবে।

কোন ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত?
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম। ব্যাংকের ৫৬ শতাংশ বা ৩৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যা এখন খেলাপি হতে শুরু করেছে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা প্রবাসীদের হলেও শুরু থেকেই ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারির জন্য সংবাদে থাকা প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার যখন এই ব্যাংকের এমডি ছিলেন, তখন এস আলম গ্রুপ প্রায় 90 শতাংশ টাকা তুলে নেয়। গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব আকিজ উদ্দিনের অনেক অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা তোলার তথ্য পাওয়া গেছে।

ইউনিয়ন ব্যাংকও শুরু থেকেই এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এস আলম গ্রুপ একাই এই ব্যাংক থেকে ঋণের নামে নিয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা; যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬৪ শতাংশ। এসব ঋণ কাল্পনিক লেনদেনের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে, যার বিপরীতে কোনো জামানত ছিল না।

২০১৭ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এস আলম গ্রুপের কাছে। এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে ব্যাংক থেকে ৬ হাজার ৭শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

এক্সিম ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতেন এর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। আওয়ামী লীগের পুরো ১৫ বছরের মেয়াদে তিনি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান ছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে টাকা তোলা হয়েছে।

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক আগে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক নামে পরিচিত ছিল। তখন এটি ওরিয়ন গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে বিদেশিরা মালিকানা নিলেও ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

ছুটিতে ছয় এমডি
গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পাওয়ার পর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো: আলীকে গত শনিবার তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। এরপর গতকাল সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি মোহাম্মদ ফোরকানউল্লাহ ও ডিএমডি আবদুল হান্নান খানকে ছুটিতে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি হাবিব হাসনাত ও এক্সিম ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে ইউনিয়ন ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এমডিরা ইতোমধ্যে পদত্যাগ করায় সেখানে কাউকে ছুটিতে পাঠানো হয়নি।

গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিশেষ প্রভিশন জারি করেছে। এই বিধানের অধীনে, দেশের ব্যাংকগুলিতে ঝুঁকি-ভিত্তিক সমন্বিত নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্য আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা সংস্থা নিয়োগের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া হয়েছিল।

জানতে চাইলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, "আমরা চাই যে ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ ব্যাংকের কাছে জানা হোক। এর পাশাপাশি, সুবিধাভোগী কারা তাও জানা দরকার। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুবিধা হবে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এই অডিট পরিচালনা করবে, যা কোন প্রশ্ন উত্থাপন করবে না।"

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow