‘চাল-ডাউল চাই না, ঘর বাঁচাও’

Jun 26, 2024 - 11:37
 0  5
‘চাল-ডাউল চাই না, ঘর বাঁচাও’

বারবার ভেঙ্গে যায়। এই নিয়া পঞ্চবঙ্গ দিলং। স্বামী পঙ্গু; আমি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। বেটিকোনা (মেয়ে) স্কুলে যায়। জুয়ান বেটি নিয়া কোত্তি (যেখানে) যামো পুশবের পাবাইছোং (পারছি) না।' রোববার রাজারহাট উপজেলার কালিরহাট গ্রামে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন তিস্তা নদী ভাঙনের শিকার নমিতা রানী।

তিস্তার ভাঙনে বাড়ি হারানো কালিরহাট গ্রামের আরেক নারী ভারতী রানী। স্বামী ও ছেলেকে অন্যের বাড়িতে রেখেছিলেন। তিস্তার পাড়ে এখনো একটি মাত্র বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কখন ভাঙে- ভয়ে দিন কাটছে। উদ্বিগ্ন ভারতী বলেন, আমরা চাল-ডাউল চাই না। ১০ কেজি চাল দিয়ে কী করবেন? আমি না খাইলেও আমার ঘরেই থাকব। তিস্তার ভাঙনে আমাদের সাত শত বছরের মাটি, ঘরবাড়ি, মুরগি সব ভেসে গেছে। আমাদের এই ঘর রক্ষা কর।'
কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, রৌমারী ও সদর উপজেলার শতাধিক পরিবার ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার আগ্রাসী ভাঙন থেকে বাঁচার দাবি জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ভাঙনে যাঁরা সর্বস্ব হারিয়েছেন তাঁদের কান্না যেন থামে না। ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ ঘরের চারা কেটে কম দামে বিক্রি করছেন।

রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও চিন্নাই ইউনিয়নের রাজা চিনাই, জয়কুমার, নামা জয়কুমার গ্রামের ৭০টি পরিবার তিস্তার ভাঙনের শিকার হয়েছে। জয়কুমার আশারিয়ান প্রকল্পটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কালিরহাট ঘাট এলাকার চাতুরা গ্রামে ৮০টি পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। ঝুঁকিপূর্ণ কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাজার।

অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে রৌমারীর ৩৫টি গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। উলিপুর উপজেলায় বাজার, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্র ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। চিলমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রের ডান তীর রক্ষা বাঁধটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভুরুঙ্গামারীতে ভাঙনে দুধকুমার নদীর তীর বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। সদর উপজেলার ধরলার ভাঙনে বিভিন্ন গ্রামের ১৪০ পরিবার তাদের জমি হারিয়েছে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তায় ভাঙন রোধে কাজ করছে পাউবো। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। তিস্তা নিয়ে আমাদের নিজস্ব একটি সমীক্ষা চলছে। যদি তাই হয়, আমি প্রকল্পটি উপস্থাপন করব। সেই বরাদ্দ না আসা পর্যন্ত তিস্তায় কোনো স্থায়ী কাজ নেই।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান, নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow