জৈব সার খামার থেকে আয় করুন পাঁচ লাখ টাকা

Dec 30, 2024 - 15:09
 0  0
জৈব সার খামার থেকে আয় করুন পাঁচ লাখ টাকা

ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তিনি তার স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মা নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন। করোনা মহামারীতে তার মা মারা যাওয়ার পর সবকিছু বদলে যায়। কায়সার খান সিদ্দিকী (৪৩) তার পরিবার ও বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তিনি সুপার জৈব সার নামে একটি জৈব সার খামার শুরু করেন। বর্তমানে, তার খামারে একবারে প্রায় 200 টন সার উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। সার বিক্রি করে বছরে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় করেন কায়সার।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়কে ৩০০ মিটার প্রবেশের পর ডানদিকে সুপার অর্গানিক ফার্টিলাইজার ফার্ম। খামারটি কায়সার খান সিদ্দিকীর বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বিংশ শতাব্দীর একটি জায়গায় অবস্থিত।

সম্প্রতি খামার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, খামারে পাঁচজন পুরুষ ও তিনজন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। কিছু শ্রমিক সার ক্রাশিং মেশিনে গুঁড়ো করছিলেন। অন্যরা একটি বুনন মেশিনে সার পরিষ্কার করছিল এবং বার্ল্যাপ ব্যাগে এটি প্রক্রিয়া করছিল।

খামারে কায়সার খান সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, অর্ডার অনুযায়ী সার উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে তিনি প্রতিবার গড়ে ৫০ টন সার উৎপাদন করেন। লোহাগাড়া ছাড়াও বান্দরবান ও কক্সবাজারের কয়েকটি এলাকার কৃষকরা সার অর্ডার করেন। প্রতি কেজি সার উৎপাদনে খরচ হয় ৬ টাকা, বিক্রি হয় ১০ টাকায়। সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০ টন সার বিক্রি করে লাভ হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জৈব সারের চাহিদা বাড়ছে। আগামীতে উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছেন কায়সার। আয়ও বাড়বে।

2021 সালের প্রথম দিকে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (গাজীপুর) থেকে বিনামূল্যে এক মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর কায়সার প্রথমবারের মতো জৈব সার তৈরি শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচ হাজার কেজি সার উৎপাদন করেন তিনি। কিন্তু মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণাগারের ল্যাব টেস্টে তা ব্যর্থ হয়। হাল ছেড়ে না দিয়ে পরের বার আবার উৎপাদন শুরু করেন। দ্বিতীয়বার তিনি সফল হন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কম খরচে বেশি ফলন পাওয়া এ সার থেকে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের মধ্যে কায়সার জৈব সারের চাহিদা বেড়েছে। ফলে সারের উৎপাদনও প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

উপজেলার চুনতি মুন্সেফ বাজার এলাকার কৃষক মঈন উদ্দিন প্রথম আলো</em>কে বলেন, আমি ৩ বছর ধরে জমিতে জৈব সার ব্যবহার করছি। রাসায়নিক সারের তুলনায় এই সারের স্থায়িত্ব বেশি। এতে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

কায়সার উৎপাদিত জৈব সারের নাম ট্রাইকো কম্পোস্ট ফার্টিলাইজার। এই কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয় জৈব পদার্থ যেমন গোবর, রক্ত, মাছ ও উদ্ভিজ্জ বর্জ্য, মুরগির বিষ্ঠা, ঝাল পাতা, হাড়ের গুঁড়া, ছাই ও নিমের তেল এবং ট্রাইকোডার্মা ছত্রাক একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে, স্তূপ করে 30 পর্যন্ত রেখে দেয়। পচে যেতে 40 দিন। কায়সার জানান, লোহাগাড়ার বিভিন্ন বাজার, কসাইখানা ও খামার থেকে সারের জৈব উপাদান সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে তিনি কেঁচো সার দিয়েও সাফল্য পান।

2023-24 অর্থবছরে, কায়সার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রণোদনা হিসাবে 800 গ্রাম আফ্রিকান কেঁচো পেয়েছেন। তাদের দিয়ে তিনি তিনশ জায়গায় কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ৭টি বেডে ২০ হাজার কেঁচো রয়েছে। বাসি গোবর খাওয়ার পর কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর শরীর থেকে রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় যা সার তৈরি করে। এটি 40 থেকে 50 দিন সময় নেয়। প্রতিবার সার বিক্রি করে তার আয় হয় ২০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি কেঁচো থেকে তিনি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় করেন।

সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন কায়সার। তিনি বলেন, রাসায়নিক সারে সরকারি ভর্তুকি 75-85 শতাংশ। সেই তুলনায় জৈব সারে কোনো ভর্তুকি নেই। সরকার জৈব সারে অন্তত ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দিলে কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। কৃষকদের চাষের খরচ অনেকটাই কমে যাবে। মাটির উর্বরতা বাড়বে।

জৈব সারের উপকারিতা সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী শফিউল ইসলাম বলেন, "জৈব সার যে কোনো সময় সব ধরনের ফসলে ব্যবহার করা যায়। এটি মাটির গুণাগুণ বজায় রাখে, পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রায় সব ধরনের পুষ্টি যোগায়। তাই, আমরা কৃষকদের প্রতি হেক্টরে 3-4 মেট্রিক টন শাকসবজি এবং কৃষি জমিতে এবং 5-10 মেট্রিক টন ব্যবহার করার পরামর্শ দিই। ফলের গাছে প্রতি কেজি।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (গাজীপুর) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এম নাজিম উদ্দিন প্রথম আলো</em>কে বলেন, জৈব সারই ভবিষ্যতের কৃষি। এ সার ব্যবহারে দিন দিন উৎপাদন বাড়বে। এই সার মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং পরিবেশকে দূষিত করে এমন সমস্ত বর্জ্য জৈব সার তৈরির জন্য পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে জৈব সার পরিবেশ রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আমদানিনির্ভর রাসায়নিক সারের ভর্তুকি বাবদ সরকারকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। জৈব সারের সার্বিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow