নতুন পাঠ্যপুস্তকে স্বাধীনতার ঘোষণাসহ ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে?

Dec 31, 2024 - 13:08
 0  0
নতুন পাঠ্যপুস্তকে স্বাধীনতার ঘোষণাসহ ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে?

441টি পাঠ্যপুস্তক 41 জন বিশেষজ্ঞ দ্বারা সংশোধিত এবং সংযোজন ও মুছে ফেলা হয়েছে।

নির্যাতিত নেতা ভাসানীর ছবি সম্বলিত প্রথম অধ্যায় হলো ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’।

পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে যুক্ত হচ্ছে ছয়টি নতুন প্রবন্ধ, কবিতা বা ছড়া।

আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে ইতিহাসের পাশাপাশি সাহিত্যেও এসেছে পরিবর্তন। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষণাসহ বেশ কিছু বিষয় সংযোজন ও অপসারণ করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের শহীদসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের শহীদদের স্মরণ করা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এবার চার কোটির বেশি বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা প্রায় ৯৬.৪ মিলিয়ন। আর মাধ্যমিকের (মাদ্রাসা এবতেদায়ি সহ) মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০৯.৬ মিলিয়ন। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এক দশক আগে তৈরি করা পুরনো পাঠ্যক্রমের আলোকে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য এনসিটিবি ৪১ বিশেষজ্ঞ নিয়ে ৪৪১টি পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করেছে। অনেক বিষয়বস্তু যোগ এবং সরানো হয়েছে. বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস এবং কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জুলাই বিদ্রোহের বিষয়সহ কিছু নতুন গল্প ও কবিতা নতুন স্থান পেয়েছে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির 'বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি' বিষয়ের নতুন বইয়ের 'আমাদের মুক্তিযুদ্ধ' শিরোনামের অধ্যায়ের প্রথম অংশে নির্যাতিত জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি রয়েছে। . এর পাশেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। সেখানে জাতীয় চার নেতার ছবিও রয়েছে। পুরনো বইয়ে একই জায়গায় শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ছবি ছিল।

নতুন বইয়ের একই অধ্যায়ে, 'পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বারা গণহত্যা' শিরোনামের নিবন্ধে বলা হয়েছে, '...পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই হামলার নাম দিয়েছে "অপারেশন সার্চলাইট"। সেই রাতেই গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর ২৭ মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারও স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।

একই বিষয়ে একটি পুরানো বইয়ে এই অংশে লেখা ছিল, ‘...পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর এই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ ভোরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়...।

চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ পাঠ্যপুস্তকেও স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন বইটিতে ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামের অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি এবং মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার ছবি রয়েছে। এখানকার বিষয়বস্তুতে বলা হয়েছে, ‘...সেই রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর ২৭ মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে পুনরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

পুরোনো বইয়ে সংশ্লিষ্ট লেখায় শুধু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি ছিল। আর স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত অংশে লেখা ছিল, ‘সেই রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতারের আগে অর্থাৎ ২৬ মার্চ ভোরে বঙ্গবন্ধু একটি বেতার বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়।

এছাড়া আরো কিছু ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এতদিন বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদের পরের পাতায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, পতাকা তৈরির নিয়ম, জাতীয় সঙ্গীত থাকত। কিন্তু নতুন বাংলা বইয়ে সেগুলোকে আবার সাজানো হয়েছে এবং বইয়ের শেষ প্রচ্ছদের আগে পৃষ্ঠায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

শহীদ আবু সাঈদ ও মুগদোককে স্মরণ করছি

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির জন্য আমার বাংলা বইয়ে ছয়টি নতুন নিবন্ধ, কবিতা বা ছড়া যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে 'আমরা তোমাদের ভুলবো না' শিরোনামের প্রবন্ধে জুলাই বিদ্রোহের শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগদোকের ছবিসহ এই বিদ্রোহের সকল শহীদদের স্মরণে লেখা রয়েছে।

এই নিবন্ধে প্রায় ২০০ বছর আগে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করা শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীর থেকে শুরু করে এ বছরের জুলাই বিদ্রোহ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে।

পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর বিপ্লবের গ্রাফিতিসহ বিভিন্ন বিষয়কে স্থান দেওয়ার জনসাধারণের দাবি ছিল। এবার ইতিহাসের বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করে বাংলা-ইংরেজি বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে জুলাই বিপ্লবের প্রসঙ্গ। আর মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য বীরাঙ্গনারা আগে অবহেলিত ছিলেন। এবার তাদেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ইবাদত পরিহার করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে পাঠ্যপুস্তক ব্যবহারের প্রবণতা বন্ধ হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow