লবণাক্ত জমিতে 'কেনাফ' চাষে নতুন আশা
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট লবণাক্ত জমিতে পাটের বিকল্প হিসেবে আঁশ ফসল কেনাফের চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।
বরিশাল বিভাগের চার জেলায় লবণাক্ত জমিতে পাটের বিকল্প হিসেবে আঁশ ফসল 'কেনাফ' নতুন আশা জাগাচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন এই ফসলের চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই)।
বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও পিরোজপুর এই চার জেলায় প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর লবণাক্ত জমি বছরের বেশিরভাগ সময়ই পতিত থাকে। এ জমিকে বহু ফসলি করার লক্ষ্যে কেনাফ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের কলাপাড়া উপকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, গত এপ্রিলে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ১২ জন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে এ ফসলের চাষ করেছেন এবং এতে ব্যাপক সাফল্যও এসেছে। তারা জানান, পাটের বিকল্প হিসেবে বিজেআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত ফাইবার ফসল কেনাফ লবণ-সহনশীল এবং জোয়ার-ভাটার ঢেউয়ের মধ্যেও টিকে থাকতে সক্ষম। অন্যদিকে, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের চার জেলায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ত। আমন কাটার পর লবণাক্ততার কারণে এসব জমিতে আর কোনো ফসল ফলানো যায় না। যা ধীরে ধীরে এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। লবণাক্ততার কারণে কৃষিতে তাদের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়াতে কৃষকরাও নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। কিন্তু লবণাক্ততা, ঝড়-বন্যাসহ জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের নানাবিধ প্রভাব মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, ২০২৩ সালে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গবেষণার পর পাটের দুটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেন। তাদের একটি তোষা পাট, অন্যটি কেনাফ। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ড এ দুটি জাত অবমুক্ত করে। এখন দেশের উপকূলীয় এলাকায় জাতটি ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বছর প্রথমবারের মতো বরিশালের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত ও অনুর্বর জমিতে নতুন জাতের এ ফসলের চাষ শুরু হয়েছে। এতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে এবং লবণাক্ততা কমবে।
ইনস্টিটিউটটি আরও জানিয়েছে যে কেনফের উত্স আফ্রিকায়। এটা ঠিক পাটের মতো, কিন্তু পাট নয়। এতে পাটের চেয়ে বেশি ফলন হয়। কেনফ লবণাক্ততা, খরা এবং অবাঞ্ছিত বৃষ্টি মোকাবেলা করে বেড়ে উঠতে পারে। ফলে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বপনের উপযোগী। কেনফের জন্য পাটের চেয়ে কম আগাছা ও পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। এটি রোগ এবং কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধেও বেশি প্রতিরোধী।
বরিশালের আঞ্চলিক কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিক প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু স্থানীয় বিজ্ঞানীরা নতুন ফসল কেনাফ উদ্ভাবন করেছেন, তাই এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে এ ফসলকে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা গ্রামের শহিদুল ইসলাম এবারই প্রথম ২০ শতাংশ জমিতে কেনাফ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, "এই প্রথম আমি পরীক্ষামূলকভাবে ২০ শতাংশ জমিতে কেনাফ চাষ করেছি। গত এপ্রিল মাসে রোপণ করা ফসল থেকে প্রতি শতাংশে প্রায় ১২ কেজি আঁশ পেয়েছি। প্রথম সাফল্যের পর আবারও কেনাফ লাগিয়েছি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জানুয়ারির শুরুর দিকে প্রতি শতাংশে তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি বীজ পাব কেনফ চাষ ধানের চেয়ে বেশি।
পটুয়াখালী পাট গবেষণা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আফলাতুন কবির জানান, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত জাতের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১০ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব। ) কেনাফ চাষ সম্প্রসারিত হলে পতিত জমি চাষের আওতায় আসবে বলে তিনি মনে করেন।
What's Your Reaction?